রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৮ পূর্বাহ্ন
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ২০১৬ সালের ৭ জুলাই; ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাতের ঠিক আগে তল্লাশি চৌকিতে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্য, স্থানীয় এক গৃহবধূ ও এক জঙ্গি নিহত হন। আহত হন মুসল্লিসহ অন্তত ১৬ জন।
বুধবার (৭ জুলাই) দেশ কাঁপানো বীভৎস ওই হামলার ঘটনার পাঁচ বছর পূর্ণ হলো। তবে, এ সংক্রান্ত মামলার বিচারকাজ এখনও শেষ করা যায়নি। ধীরগতির কারণে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণও শুরু হয়নি। কিশোরগঞ্জবাসীর দাবি, এ ধরনের নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
বর্বরোচিত ওই জঙ্গি হামলায় কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল আনছারুল হক ও জহিরুল ইসলাম, সবুজবাগ এলাকার গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিক এবং আবির হোসেন নামের এক জঙ্গি ঘটনাস্থলে নিহত হন। এছাড়া ১২ পুলিশ সদস্য এবং চার মুসল্লি গুরুতর আহত হন। পরে পুলিশ ও র্যাব অভিযান চালিয়ে গুরুতর আহত শফিউল ইসলাম ডন নামের সশস্ত্র এক জঙ্গি এবং তানিম নামের স্থানীয় এক সন্দেহভাজন যুবককে আটক করে।
চার বছরেও আলোচিত এ মামলার বিচারকাজ কেন শেষ করা যায়নি? এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তারা জানান, হামলার তিন দিন পর ১০ জুলাই সন্ত্রাসবিরোধী আইনে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২৮ নভেম্বর মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলাটি বর্তমানে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (দ্বিতীয়) আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আছে।
তারা আরও জানান, মামলার আসামির ২৪ জনের মধ্যে প্রায় সবাই হলি আর্টিজান রোস্তোরাঁয় হামলা মামলার আসামি। তাদের মধ্যে ১৯ জনই বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। পরে বেঁচে থাকা পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়।
আসামিরা হলেন- কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম তারাপাশা গ্রামের জাহিদুল হক তানিম, গাইবান্ধার রাঘবপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর চলম ওরফে রাজীব গান্ধী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাজারদীঘা গ্রামের মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, গাইবান্ধার গান্ধারপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও কুষ্টিয়ার সাদীপুর কাবলীপাড়া গ্রামের আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ। বর্তমানে তারা দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি আছেন।
সরকার ওই ঘটনায় নিহত দুই পুলিশ সদস্যের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা এবং নিহত গৃহবধূর সন্তানকে ব্যাংকে চাকরি দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে।
জঙ্গি হামলায় নিহত ঝর্ণা রানীর স্বামী গৌরাঙ্গ নাথ ভৌমিক বলেন, ওই ঘটনায় আমার পুরো পরিবার তছনছ হয়ে যায়। ছোট ছেলেটার মুখের দিকে তাকাতে পারি না। আমি নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার চাই।
স্থানীয় নীরেন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, সেদিনের জঙ্গি হামলার ঘটনা মনে হলে এখনও এলাকার মানুষ শিউরে ওঠেন। আজও মানুষের কানে বাজে মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজ। আমরা জঙ্গিমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ দেখতে চাই।
কিশোরগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক বলেন, ‘ইতোমধ্যে চাঞ্চল্যকর মামলাটির চার্জ গঠন হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ ও আদালত এখন সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য প্রস্তুত।’ মামলার আসামিদের প্রায় সবাই ঢাকার হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা মামলার আসামি। তাদের মধ্যে ১৯ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তাই অবশিষ্ট পাঁচজনের বিরুদ্ধে পুলিশ চার্জশিট দিতে পেরেছে— জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) বলেন, পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সফল তদন্ত শেষে মামলার চার্জশিট দিয়েছে। দেশ কাঁপানো ওই জঙ্গি হামলা আমাদের জন্যও বিশেষ বার্তা ছিল। আজ আমরা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা গ্রহণ করে তাদের নির্মূল করতে পেরেছি।
এ মামলার সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি ‘মৃত্যুদণ্ড’ হবে বলে মনে করেন তিনি। মাশরুকুর রহমান খালেদ আরও বলেন, ওই ঘটনায় নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। আহতদেরও চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সহযোগিতা করা হচ্ছে। এমনকি নিহত গৃহবধূর এক সন্তানকে চাকরিও দেওয়া হয়েছে।